সত্যজিৎ রায়ের "হীরক রাজার দেশে" সিনেমা তে উনি বলেছিলেন, "জানার তো শেষ নাই - জানার চেষ্টা বৃথা তাই" । এই লাইন টা যে আমার কি ভাল লাগে তা আর বলবার নয় । তবু তো চোখ কান বুজে থাকা যায়না । এই information bombardment এর যুগে, ঠিক নানারকম information সুড় সুড় করে মগজে ঢুকে পড়বেই পড়বে । তার ওপর যদি তোমার কোন বিষয়ে বিশেষ interest থাকে, তবে তো কথাই নেই ।
আমার যেমন ইতিহাসের প্রতি ঝোঁক । ঋত্বিক রোশন এর "যোধা আকবর" দেখে তো একেবারে পাগলা । যাই হোক Bollywood এর ব্যাপার স্যাপার একটু reality র নমক সহযোগে গ্রহণ করতে হয় । সেই reality র খোঁজে পুরনো বই পত্র ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম । Google Master তো আছেই ।
যাক , কাজের কথায় আসা যাক ।
১) প্রথমেই বলি , যোধাবাই ** মোটেও সম্রাট আকবরের বেগম ছিলেননা । Political কারনে আকবর ১৫৬২ সালে ২০ শে জানুয়ারী বিয়ে করলেন যাকে তাঁর নাম হল হীরা কুমারি বা হীর কুঁয়র । তিনি রাজস্হানের আম্বের রাজ্যের রাজা ভারমলের মেয়ে । রাজস্থানের আম্বের রাজ্য আজ যা জয়পুর নামে খ্যাত, ভারমল সেখানকার রাজা ।
মোঘল গভরনর মীর্জা মহম্মদ এর বিশাল সৈন্য সেনার ভয়ে রাজা ভারমল আকবরের ছত্রছায়ায় আসতে বাধ্য হন
এবং নিজের মেয়ে হীর/হরখা বাই ওরফে যোধা র সঙ্গে আকবরের বিয়ে দেন । আকবর তখন বিশ বছরের যুবক এবং রুখেয়া বেগম ও সালিমা বেগমের স্বামী । তবে
এই রাজপুত স্ত্রী হীর বাঈ কালেদিনে হয়েছিলেন আকবেরের প্রধানা মহিষী এবং পরবর্তী
সম্রাট জাহাঙ্গীরের মাতা । রাজপুতদের মধ্যে ভারমলই প্রথম রাজা যিনি মোঘলের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্হাপন করেন । সম্রাট আকবর ভারমলের পুত্র ভগবান দাস এবং তস্য পুত্র মান সিংহ কে নিজের দরবারে উঁচু পদ দিয়েছিলেন । হলে কি হবে , অন্যান্য অনেক রাজপুত রাজারা ভারমলের বংশে মেয়ের বিয়ে দেওয়া তো দুরের কথা , এক আসনে বসে আহার করতেও আপত্তি করেছিলেন ।
Begum Heer Kunwari giving birth to Jahangir. (Wikipedia)
২) আকবরের দু জন ধাত্রী-মা ছিলেন - যাকে বলে wet nurse । একজনের নাম মাহম আঙ্গা আর জনের নাম জিজি আঙ্গা।
আকবর এঁদের দুজনকেই মায়ের মত শ্রদ্ধা করতেন । জিজি আঙ্গা র স্বামী আত্গা খান কে উওকিল যাকে বলে prime minister এর পদ দিয়েছিলেন এবং মাহম আঙ্গার ছেলে আধম খান কে বিশাল মোঘল সৈন্য বাহিনীর সেনাপতি অর্থাৎ
general পদে অভিসিক্ত করেন । মাহম আঙ্গা আকবরকে যে খুবই ভালবাসতেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার উগ্র বাসনা মনে মনে পোষণ করতেন । আকবরের আতগা খানের প্রতি সশ্রদ্ধ ভালবাসা কে তিনি নিজের ক্ষমতার অন্তরায় মনে করতেন । ওদিকে মাহম আগার ছেলে আধম খান আসম সাহসিক যোদ্ধা হলেও ছিলেন ন্যায়- নীতি জ্ঞান হীন এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির । মালোয়া তে যুদ্ধ করতে গিয়ে আধম খান যে রক্তবন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন , বিশেষ করে বাজ বাহাদুর এবং রূপমতীর গল্প তো সবাই জানেন ।
১৫৬২ সালের মে মাস । ইতিহাস সাক্ষী । হয়তো ক্ষমতার লড়াই বা অন্য কোন কারন, এহেন চরিত্রের আধিকারি এবং ক্ষমতালোভী আধম খান খোলা সভায় হঠাৎ অতর্কিতে আক্রমণ করে বৃদ্ধ আতগা খান কে হত্যা করেন । আকবর ছিলেন অন্দর মহলে.- তাঁর কাছে তৎক্ষনাাৎ খবর গেলো ।
১৪ বছর বয়সে যিনি তরওয়ালের এক কোপে হিমুর মাথা কেটে বাদশা হলেন এবং ২০ বছর বয়সে অভিভাবক বৈ্রাম খানকে মক্কার উদ্দেশে রওয়া্না করিয়ে তামাম হিন্দুস্হানের শাসন ভার নিজের হাতে নিলেন, সেই আকবর এবার ধৈর্য্য হারালেন । তাঁর ধমনীতে বইছে তৈমুর লঙ আর চেঙ্গিস খানের রক্ত - ক্রোধে আকবর জ্ঞান হারালেন । প্রবল শক্তিমান আকবর আধম খানকে ধরাশায়ী করে প্রহরী দের হুকুম দিলেন - ওকে নিয়ে যাও ওই প্রাচীরের ওপর - নীচে ফেলে দাও। দুর্গের প্রাচীর রাজপথ থেকে ১০ মিটার উঁচু । প্রহরীরা তাই করল । আধম খান আহত , কিন্তু তখনো দেহে প্রাণ আছে । এবার আকবর আদেশ দিলেন , ওকে ওপরে উঠিয়ে নিয়ে এসে আবার ছুঁড়ে ফেলতে , যতক্ষন না সে পুরোপুরি প্রান হারায় ।
আধম খানের মা মাহম আঙ্গা পুত্রশোকে অন্নজল ত্যাগ করলেন । আকবরের সঙ্গে আর দেখা করেননি । হয়তো এই নৃশংস শাস্তির বিরূদ্ধে এই ছিল তাঁর নীরব প্রতিবাদ । চল্লিশ দিন পর তিনি যখন অনশনে প্রাণত্যাগ করলেন তখন শাহ -এন-শাহ্ নেমে এলেন পথের ধূলায় মাতৃৃসমা মাহম আঙ্গার জানাজায় কাঁধ দিতে ।
৩) আকবর হাতির লড়াই দেখতে ভাল বাসতেন । সে তো কোন দোষের কথা নয় । কিন্তু সে লড়াই চলত যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি হাতি মরে যায় । সে বড় নৃশংস দৃশ্য ! এই ছিল আকবরের অবসর কালের বিনোদন ।
৪) আকবরের জীবনে প্রথম দিকের ঘটনা । তখন ইবাদৎ খানায় শুধু মুসলমান মোল্লাদের সঙ্গেই আকবর ধর্মালোচনা করতেন । নিজে নিরক্ষর হলেও অদম্য ছিল তাঁর জানার ইচ্ছা । আলোচনা সভায় একদিন আকবর বললেন, আপনারা বলছেন ঈশ্বর দুনিয়ায় সবকিছু সৃষ্টি করেছেন । কিন্তু কিছু জিনিষ নিশ্চয় মানুষ নিজের চেষ্টায় তৈরী করেছে !
মোল্লারা রেগে বললেন যেমন ?
যেমন ধরুন এই ভাষা । আল্লাহ মানুষকে গলায় স্বর দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মনের ভাব প্রকাশ করবার জন্য যে ভাষার ব্যবহার - তা কি মানুষের নিজের সৃষ্টি নয় ? প্রতিবাদ করলেন মোল্লার দল - সমস্বরে বললেন - ভাষাও ঈশ্বরের দান ।
কিন্তু কোন শিশু যদি জন্মের পর থেকে তার মা বাবার কথা না শোনে, তা হলেও সে ভাষা শিখবে ?
মোল্লার দল চীৎকার করে বললেন - নিশ্চয় পারবে - ঈশ্বরের কৃপায় সে ভাষা শিখবে ।
সেদিন আর আকবর কিছু বললেন না । আলোচনা মুলতুবি রইল ।
আকবরের আদেশে ফতেপুর সিক্রির বিভিন্ন জায়গা থেকে দশটি নবজাত শিশুকে তাদের মা বাপের কাছ থেকে কেড়ে এনে আলাদা একটি মহলে রাখা হল । দেখাশোনার জন্য মূক বধির দুগ্ধবতী ধাত্রীদের এবং মূক বধির খিদমৎগারদের নিয়োগ করা হল । এই মহল হল গুঙ্গা মহল - শাহ -এন-শাহ্ এর হুকুমে এই মহলের ত্রিসীমানার মধ্যে কেউ কথা বলেনি
মানব শিশু নিয়ে এই পরীক্ষা চলল চার বছর ধরে । চার বছর পর দেখা গেল ওই দশটি শিশুর কেউ ই কথা বলতে পারেনা - হাত পা নেড়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে মাত্র ।
আকবর এবার সেই মোল্লাদের ডেকে গুঙ্গা মহলে নিয়ে গিয়ে প্রমান করে দিলেন যে ভাষা মানুষের নিজের সৃষ্টি - ঈশ্বরের নয় । সেই দশটি শিশুর তারপর কি হল তা কেউ জানেনা । শুধু মাত্র নিজের ধারনার প্রমান দিতে গিয়ে আকবর দশটি সদ্যোজাত শিশুকে তাদের মা বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে আনলেন ।
এইখানে শ্রী নারায়ন সান্যালের "লা জবাব দেহলী অপরূপা আগ্রা" বইটি থেকে কটি লাইন উধৃত করি ।
"বাদ্শাহী খেয়ালে আকবর এমন অনেক কিছু করেছেন , যাতে তাঁকে আদর্শ ভারত-সম্রাট বলতে বাধে । তা যদি তিনি হতেন তাহলে গুংগা-মহল পরীক্ষার অব্যবহিত পরে তিনি ঐ দশটি শিশুকে মুক্তি দিতেন - তাদের শিক্ষার ব্যবস্হা করতেন ; জ্ঞান পিপাসুর পক্ষে স্বাভাবিক হত, পরীক্ষাটা চালিয়ে যাওয়া এবং দেখা, পরবর্তী পাঁচ-সাত বছরে নিরন্তর প্রচেষ্টায় মূক-বধির শিশুদের আবার স্বাভাবিক করে তোলা যায় কিনা । তা তিনি দেখেননি ! আকবরের মৃত্যু্র পর ঐ গুংগা-মহল থেকে বালকদের উদ্ধার করা হয়, তখন তাদের যথেষ্ট বয়স - অথচ সকলেই মূক ।"
৫) আর একটি ঘটনা আমাকে বিস্মিত করে । আপনারা অনেকেই হয়তো আমার সঙ্গে একমত হবেননা । বৈরাম খানের mentoring ছাড়া ১৪ বছর বয়েসের কিশোর আকবর বাদশা হতে পারতেন কিনা সন্দেহ । আকবর বৈরাম খানকে ডাকতেন "খান বাবা" বলে। আকবরের এই পিতৃস্হানীয় মানুষটির বেগমের নাম ছিল সালিমা সুলতানা । ইনি হুমায়ুনের ভাগিনেয়ী । বৈরাম খানের বয়স তখন ষাট - আকবরের আদেশে দেশ ছেড়ে তিনি চলেছেন হজ করতে মক্কার পথে । হাজি খান নামে একজন পাঠান ১৫৬১ সালের ৩১ জানুয়ারী তাঁকে আক্রমন করে হত্যা করে হিমুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে । বৈরাম খানের বেগম সালিমা সুলতানার বয়স তখন ২২ । এই পিতৃস্হানীয় মানুষটির বিধবা স্ত্রী কে আকবর বিবাহ করে নিজের হারেমে নিয়ে আসেন ।
আবুল ফজল খুব বিস্তারিত ভাবে "আকবর নামা " লিখে গেলেও আকবর ঠিক কত গুলি বিবাহ করেছিলেন এ বিষয়ে ঐতিহাসিক রা একমত হতে পারেননি । কারো মতে সাত, কেউ বা বলেন আরও বেশী । ইন্টারনেট এ এক জায়গায় দেখলাম আকবরের বেগমের সংখ্যা ৩৪।
আজ এই পর্যন্ত । আরও যদি কোনও তথ্য পাই পরে আবার লিখবো । আপনাদের মতামতের আশায় রইলাম । তথ্য অনুসন্ধানে বা বানানে যদি কিছু ভুল থাকে নিশ্চয় জানাবেন - সংশোধন ক রবো ।
**The great Mughal emperor Akbar had three historians during his rule who recorded the history of their time -- Abul Fazal wrote the Akbar Nama, Abdul Qadir Badayuni wrote the Mutakhabutawarikh and Nizamuddin Ahmed (also called Nizamuddin Bakshi) wrote the Tabqat-i-Akbari. None of them have mentioned 'Jodhabhai' in their books.

Jhikmik,age tor blogpblog poRini.Darun twaytto O tathyaor somahaar.❤
ReplyDelete