Sunday, August 2, 2020

Rajasthan Stories(5) পাগলা উট








কাজলের সিমাকোরির সঙ্গে মন্দিরে যাবার কথা ছিল। তারপর ভেবে দেখল যে তীজ উপলক্ষে নিশ্চয়
মন্দিরে খুব ভীড় হবে। তাই সে গেলোনা। সেও আজ পাঁচ সাত দিন হল। এখন সে জিদ ধরেছে যে
সোমনাথের সঙ্গেই যাবে। একসঙ্গে দুজনে, ঘোড়ার গাড়ি করে। 


সকালে কাজে বেরোনোর আগে সোমনাথ জুতোর ফিতে বাঁধতে বাঁধতে বললো -
- কাজল তুমি যদি চাও তাহলে আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে মন্দিরে যেতে পারি।


কলকাতায় থাকতে কাজল কত জায়গায় তো একা একা ঘুরে বেড়িয়েছে, কিন্ত এই গ্রাম দেশে পরিবেশ
অন্য রকম। মেয়েরা পর্দানশীন নয়, তবে সে এখানকার ডাক্তার সাহেবের বউ। একা একা টো টো করে
ঘুরে বেড়াতে পারেনা। অন্য যে একটি বাঙালী পরিবার ছিল, ছোট ছেলেটি মারা যাবার পর তারাও এখান থেকে কোথায় চলে গেছে। কাজল তাই এখন পুরোপুরি সোমনাথের পরে নির্ভরশীল। 


কাজল সোমনাথকে মনে করিয়ে দেয় -
- পুজো পার্বন না থাকলে, পুরোহিত মহারাজ বিকেলে মন্দির বন্ধ করে বাড়ি চলে যান, গেলে কিন্ত
দিনের বেলাই যেতে হবে।
- তাও তো ঠিক। দুপুর রোদে তোমার কষ্ট হবে, কাল না হয় চান টান করে তৈরী হয়ে নিওঁ।
- আচ্ছা। তুমি শিউ প্রসাদকে তাহলে বলে দিও, সকাল সকাল টাঙ্গা নিয়ে চলে আসবে।


পরদিন কাজলের মন্দিরে যাওয়া হলোনা, ঠাকুরের মনে হয়তো অন্য রকম ইচ্ছে ছিলো। ভোর হতে না হতে
সোমনাথকে ডাকতে লোক এসে হাজির। কাকে যেন মাথায় উটে কামড়েছে। মাথায় পাগড়ী পরা ছিল, তাই
রক্ষে, না হলে হয়তো লোকটা তক্ষুনি মরেই যেত।

সোমনাথ কাজলের দিকে একটা করুণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে কোনরকমে জামা জুতো পরে বেরিয়ে গেল।
দুপুরে খেতে বাড়ি এলোনা। সারাদিন যমে মানুষে টানাটানি। যখনই অবস্থা একটু ভালো বুঝেছে, মানুষটাকে
ওর হাসপাতালে আনিয়ে নিয়েছে।


সোমনাথ বাড়ি ফিরলো সেই সন্ধ্যা বেলায়। স্নান সেরে রাতে খেতে বসে, কাজলকে সব গল্প বলতে লাগলো। 
- জানো কাজল এই সব গল্প তুমি কোনও গল্পের বইতে পাবেনা।
কাজল গল্পের নামে কাছ ঘেঁষে বসে, বলে -
- উট গুলো দেখতে বদ্ খত বটে, তবে মনে তো হয় শান্ত শিষ্ট। কি হল বলোতো, উটটা পাগল হয়ে গেল
নাকি?   হ্যাঁ গো যাকে কামডেছে,, সে লোকটা বাঁচবে তো?


সোমনাথ ভাবে, কাজলের মনে মায়া  দয়া  বড্ড বেশী, ওকে ডাক্তারী করতে হলে খুব মুস্কিলে পডতো। কি
কথা ভেবে ওর হঠাৎ হাসি পেয়ে যায়। বলে -
- না ঠিক পাগল হয়নি তবে যা হয়েছে তাকে এরা বলে “মস্ত্” - mating season এ অনেক উট মস্ত্ হয়ে
যায়। তখন তার সঙ্গিনীর দরকার। জঙ্গলী উট তো আর নেই - সবই domesticated. তাই তার সঙ্গিনী
খুঁজে আনার দায়ীত্বও তার মালিকের।
- তুমি উটটাকে দেখলে?
- দেখলাম তো ।
- কাছে গেলে নাকি?
- মাথা খারাপ? পাগল উট তো আর ডাক্তার বলে আমায় রেয়াৎ করবেনা। 

কাজল হেসে ওঠে, বলে -
- তাইতো, তোমার মাথায় উটে কামড় দিলে তখন তোমার চিকিৎসা করবে কে? যাক্ এবার বলো, তারপর?
- উটটা বাঁধা আছে, আমি একটু দূর থেকে দেখলাম - সে এক বীভৎস দৃশ্য। ছটফট করছে, মুখ দিয়ে সাদা
ফেনা বেরোচ্ছ। আর অবাক কান্ড, মাঝে মাঝে না মুখ দিয়ে কিরকম যেন জিভের মতো বিরাট কি একটা
জিনিষ, না জিভ নয়, গোলাপী চামড়ার বেলুনের মতো। গোঁ গোঁ আওয়াজ করে ওটা মুখের একদিক
দিয়ে বের করছে, আবার ঢুকিয়ে নিচ্ছে। 
- বলো কি গো?
- বাড়ি শুদ্ধ লোক ভয়ে অস্থির, উটটা কাউকে কাছে ঘেঁষতে দেয়না - তেড়ে আসে।  খালি একটা ছোট সাত
বছরের ছেলে, তাকে কিছু বলেনা। খাবার দাবার সেই বাচ্চাটাই গিয়ে দিয়ে আসে। 
- তা এই লোকটা…?
- বাচ্চাটা দুদিন আগে গাছ থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে জোর চোট পেয়েছে, তাই তার বাবা উটটাকে খাবার
দিতে গিয়েছিল। সে যে এতটা ক্ষেপে যাবে, কেউ বুঝতে পারেনি। তর্জন গর্জন করছিলোনা, ভেবেছিল
হয়তো একটু শান্ত হয়েছে।

এবার কাজলের প্রশ্ন -
- কিন্ত ওর মালিক ওর সঙ্গিনীর ব্যবস্থা করছেনা কেন? 
- যাকে তাকে ধরে আনলে তো হবেনা !
- মানে?
- মানে, অপর পক্ষকেও ready হতে হবে। মানে she has to be in heat as well.

প্রথম প্রথম কাজল সোমনাথকে লজ্জা পেত, কিন্ত যেহেতু সোমনাথ ডাক্তার সে এখন খোলাখুলি ভাবে কথা
বলে।

সোমনাথ আরও বলে -
- Animal kingdom এ নিয়ম আলাদা, মানুষের মতো নয়।
- তাই তো। প্রকৃতির কাজ হল reproduction - কাজেই দু পক্ষকেই ready থাকতে হবে। 
- পাশের গ্রামে এক উটনীর সন্ধান পাওয়া গেছে। আনতে লোক গেছে। এমনিতে পুরুষ উটের মালিক
টাকা নেয়, কিন্ত এক্ষেত্রে গরজ বড়ো বালাই। কি বলো কাজল?


কাজল এবার মাথা নীচু করে হাসতে থাকে।
- হাসছেন কি ম্যাডাম, উটনী এসে পৌঁছলে তখন পাড়ার লোক ভীড় করে আসবে, সেই মিলন লীলা
দেখতে। তখনও মানুষের সাহায্য দরকার। এত awkward জন্তু আর পৃথিবীতে দুটি নেই। এই একমাত্র
জন্তু যাকে mating এর সময় মাটিতে বসে পড়তে হয়।
- এত সব তো জানতাম না, কলকাতার চিডিয়াখানায় সেই ছোটবেলায় উট দেখেছিলাম।


সোমনাথ নিজের মনে ভাবতে থাকে। এই মরুভূমির রূঢ় প্রকৃতির সঙ্গে যুঝতে যুঝতে লক্ষ লক্ষ বছরের
evolution এর ফলে উট পরিণত হয়েছ এক অতি বিরল প্রাণীতে। সিনেমাতে উটের ওঠা বসা দেখেছে।
বসবার সময় প্রথমে সামনের পা দুটো হাঁটু মুডে তারপর পিছন দিকে ঝুঁকে তারপর আবার সামনের দিক।
তিন পর্যায়ে ভাগ করা। বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়াতে গেলেও ওই একই ব্যাপার। মরুভূমির মধ্যে দিয়ে
চলাচল, জল জোটেনা, তখন পিঠের কুঁজের মধ্যেকার জমানো চর্বি ভাঙিয়ে চলে।

খাদ্যের মধ্যে তো ওই কাঁটা গাছের ঝোপ ঝাড়। ঠোঁট দুটো বিভৎস রকমের মোটা - যাতে খাবার সময় কাঁটা না ফোটে। মুখের ভেতরকার চামড়াও তেমনি পুরু। তিন সারি চোখের পাতা, দু সারি বড় বড় চোখের পাতার লোম, এসবই তাকে বালির ঝড় থেকে তার চোখকে বাঁচানোর জন্যে প্রকৃতি তৈরী করে দিয়েছে। 

বুকের নীচে, হাঁটুর কাছে আছে মোটা চামড়ার padding, যাতে তেতে ওঠা বালির ওপর বসতে কষ্ট না হয়। 
সোমনাথ লক্ষ করেছে যে গরু মোষের বেলায় যেমন তাদের নাকের ছিদ্র দিয়ে বিঁধে দড়ি পরানো হয়ে থাকে,
উটের বেলায় তা নয়।

জিগেস করে জানা গেল যে, শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্যে আর বালির ঝড় থেকে বাঁচবার জন্যে - 
প্রকৃতির বরদানে উটেরা ইচ্ছে মতো নাকের ফুটো বুজিয়ে ফেলতে পারে। তাই এদের জন্যে আলাদা ব্যবস্থা।
যা খায় তার মধ্যে অনেক কাঁটা থাকে, তাই এরা খাবার অনেক ক্ষণ ধরে চিবোতে থাকে। একবার গিললেও
আবার সেটা মুখে এনে জাবর কাটে। 

এবার কাজলের প্রশ্ন -
- এখন যে উটনী আসবে, সে যদি এখন pregnant হয় তবে কত দিন পর বাচ্চা হবে?
- সে ধরো বারো চোদ্দ মাস তো লাগবেই।
- তখনও নিশ্চয় মানুষের সাহায্য লাগবে?
- নিশ্চয় লাগবে, তবে তোমার ভয় নেই - সে সময় আমার ডাক পডবেনা। 

এ কথায় ওরা দুজনে এত জোরে হেসে উঠলো যে সিমাকোরি এসে একবার উঁকি মেরে গেলো।

পরদিন হাসপাতাল থেকে খবর এলো, পাগলা উটের মালিক ভালো আছে আর তার উটনীও বিকেল বেলা
এসে পৌঁছে যাচ্ছে। সব ভালো যার শেষ ভালো।


No comments:

Post a Comment

Please leave your comments