Thursday, July 2, 2020

Father's Day বাবা দিবস





Father’s Day র বাংলা কি হবে? পিতৃদিবস? বাবা দিবস? ভেবে চিন্তে বাবা দিবসটাই পছন্দ হোল। বেশ ঘরোয়া মনে হয় -  যেন বাবা খুব কাছের মানুষ। একজন পুরুষ মানুষ যে কত রকম ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়! বাবা, ছেলে, স্বামী, ভাই, বন্ধু আরো কত কি! এক এক জনের কাছে তার এক এক রূপ। যে খুব ভালো স্বামী সে হয়তো ছেলে হিসাবে খুব ভালো নয়। যে খুব ভালো বন্ধু সে আবার হয়তো ভাই হিসেবে খুব ভালো নয়।
 সে যা হোক, বাবা দিবসে Facebook এ অনেকের অনেক posting দেখলাম।
ভারী সুন্দর সুন্দর লেখা। তাদের চিনি তবে তাদের বাবাদের চিনিনা - ওই ছেলেমেয়েদের চোখ দিয়েই বাবাদের চেনার চেষ্টা। তবে অঞ্জলীর বাবাকে আমি চিনতাম, আজ তাঁর গল্পই আপনাদের শোনাবো।
   
*****************************

রুণু এক হাতে একটা চিরুনি আর আরেক হাতে দুটি সবুজ ফিতে নিয়ে ঝড়ের বেগে মানুর ঘরে ঢুকে পড়লো। 
  • এই দিদি, দিদি আমায় দুটো বিনুনি করে দে তো -
রুণুর বয়েস দশ, ওর দিদি মানু ওর চেয়ে পাক্কা সাতটি বছরের বড়। মানু তখন সবে মার ড্রেসিং টেবিলের সামনে তার পাউডার লিপস্টিক এইসব নিয়ে গুছিয়ে বসেছে। খুবই বিরক্তির সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে বলল -
  • কি ব্যাপার, তুমি আবার কোথায় চললে ?
  • মার সঙ্গে, যোধপুর পার্কে অনিমা কাকিমার বাড়ি ।
  • ওখানে আবার কেন?
  • বারে, আজ কাকিমার জন্মদিন না - মা তো প্রত্যেক বছর যায় বাবার সঙ্গে। আজ বাবা গেছে সল্ট লেকে বড় পিসীমাকে দেখতে, তাই মা আমায় নিয়ে যাচ্ছে।
  • তোকে যেতে হবেনা।

এই সময় রুণুর একটা ইস্ত্রি করা জামা নিয়ে মার প্রবেশ । মানুর শেষের কথাটা শুনে ঝঙ্কার দিয়ে বললেন - 

  • নিজে তো হাজার সাধলেও যাবেনা - আবার ছোটটার মাথা খাওয়া হচ্ছে কেন ?
মানু মার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলল -
  • আমি চাইনা রুণু ও বাড়ি যায়
  • কেন, ও বাড়িতে কি আছে ? বাঘ না ভাল্লুক ?
  • না ভূত।
  • জানিনা বাপু - তোদের মাথায় কখন যে কি চাপে! অনিমা আর বিভূতি ঠাকুরপো কত করে বলল, রুণুকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতে! নাও -  এখন দয়া করে তাড়াতাড়ি ওর চুলটা বেঁধে দাও তো।
রুণুর জামাটা খাটের ওপর ফেলে দিয়ে মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল -  যাবার সময় কথা কটা রুণুর দিকে ছুঁড়ে দিয়ে -
  • তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিয়ে আমায় উদ্ধার করো। আমি ছোটুকে গাড়ি বের করতে বলছি।

মানু হতাশ ভাবে মাথা নাড়ে। রুণুর চুল বেঁধে দিতে দিতে বলে -
  • রুণু আমার একটা কথা খুব মন দিয়ে শোন -
  • কি কথা দিদি ?
  • বিভূতি কাকু যদি তোকে চকোলেট দেব বলে অন্য ঘরে ডাকে, কক্ষনো যাবিনা, বলবি আমি চকোলেট খাইনা।
  • কিন্তু আমি তো চকোলেট খুব ভালোবাসি !
  • জানি, কিন্তু তুই যাবিনা, সবসময় মার কাছাকাছি থাকবি। মার পাশে বসে থাকবি, অঞ্জু খেলতে ডাকলেও যাবিনা।
  • সে কি - কেন ?
  • পরে বলবো তোকে
  • ঠিক আছে দিদি 
যথাসময়ে রুণু তার মার সঙ্গে গিয়ে হাজির হোল যোধপুর পার্কে অনিমা কাকিমা আর বিভূতি কাকুর বাড়ি। সারাটা রাস্তা ভাবতে ভাবতে গেল দিদি ওরকম অদ্ভুত কথা কেন বললো! বিভূতি কাকু তো বাবার ছোট বেলাকার পাড়ার বন্ধু
                                                 *********************
 
বিভূতি কাকু আর অনিমা কাকিমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে। মেয়েটি সব থেকে ছোট, নাম অঞ্জলী। কিন্তু আজ সে বাড়ি নেই, গান শিখতে গেছে। ছেলেরা একবার মুখ দেখিয়ে মাকে প্রণাম করে যে যার ঘরে সেঁধিয়ে গেল। রুণু খুঁজে পেতে National Geographic এর একটা copy নিয়ে ছবি দেখতে লাগল। বিভূতি কাকু আর অনিমা কাকিমাকে প্রণামের পর্ব
সারা হতে না হতেই থালা ভরে ভরে খাবার আসতে লাগল। রুণু আর কি করে, এদিক ওদিক দেখে খাবারের থালায় মন দিল। বাড়িতে বানানো কড়াই শুঁটির কচুরী, সন্দেশ আর অরেঞ্জ স্কোয়াশ। একটু পরে বিভূতি কাকু রুণুর দিকে মনোযোগ দিলেন -
  • এই যে খুকি, তোমার কোন ক্লাস ?
বিভূতি কাকু এত দিনেও ওর নাম জানেন না বা মনে রাখতে পারেন না। রুণু বিরক্তি চেপেই বললো -
  • ক্লাস ফাইভ
প্রায় পাঁচ সেকেন্ডের বিরতি। বিভূতিকাকু এবার ওর হাত ধরে বললেন -
  • খুকি চকোলেট খাবে ? আমার সঙ্গে এসো তোমায় চকোলেট দেবো।
চকোলেট দেবো? রুণুর তখন দিদির আদেশ কানে বাজছে। চকোলেট দেবো বলে ডাকলে খবর্দার যাবিনা। রুণু তার বিনুনির ফিতে নিয়ে খেলা করতে করতে বললো -
  • কাকু, আমি চকোলেট একদম ভালোবাসিনা।
এক মুহূর্তের জন্য মার চোখে একটা অবাক করা চাহনি খেলে গেল - কারণ উনি জানেন যে রুণু চকোলেট খেতে সাংঘাতিক ভালোবাসে। কিন্তু মুখে কিছু বললেন না।
বিভূতি সান্যালও কিছুক্ষণ রুণুর দিকে সরু চোখে চেয়ে রইলেন, তারপর বললেন -
  • ঠিক আছে, তোমরা তাহলে গল্প সল্প করো, আমায় আবার অফিসের কয়েকটা ফাইলে সই টই করতে হবে।
রুণুর মা বললেন -
  • আমরাও এবার উঠবো ঠাকুরপো - যাদবপুরে আমার সেজো মামীমার বাড়ি একবার দেখা করে যাবো। এলামই যখন এদিকটায়।

                                                ********************

বাড়ি ফিরেই দিদির প্রথম প্রশ্ন -
  • কি রে -
  • ডেকে ছিলো, যাইনি ।
  • Good girl!
  • এবার বলো কেন?
  • বিভূতি কাকু একা পেলেই ছোট মেয়েদের ফ্রকের নীচে হাত ঢুকিয়ে দেয়।
  • এ ম্যাঁ –
  • হ্যাঁ, যা বললাম। আর কাউকে কিছু বলবিনা -
  • মা কেও না?
  • না
 
রুণু না বললেও মানু ওদের মাকে কিছু হয়তো বলে থাকতে পারে কারণ সেদিনের পর থেকে ওরা আর কখনও বিভূতি কাকুদের বাড়ি যায়নি।

বড় হওয়ার পর রুণু বিভূতি কাকুর সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পারলো। গভর্নমেন্টে খুব বড় post এ কাজ করেন। ঘুষ নেবার বদনাম আছে। আগে আগে নাকি বিভূতি কাকু মদ টদ খেয়ে কাকিমাকে খুব গালিগালাজ করতেন। কিন্তু একদিন বড় ছেলের কাছে প্রচন্ড দাবড়ানি খেয়ে সে সব বন্ধ হয়েছে। ছেলে বলেছিলো, সে পাড়ার ছেলেদের দিয়ে মেরে হাত পা ভেঙে দেবে।

******************
                                                                                                                                                                       
রুণু যখন চাকরি করে, ওর বস্ একদিন কথায় কথায় বললেন -
  • আরে তুমি বিভূতি সান্যালকে কিভাবে চেনো ?
  • আমার কাকু হন।
  • নিজের?
  • না নিজের নয়। এক কালে বাবার বন্ধু ছিলেন, এখন আর আমাদের মধ্যে যোগাযোগ নেই।
  • উনি খুব চালু লোক।
  • কেন বলুন তো ?
  • কন্ট্রাক্টার দের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে নিয়ে লাল হয়ে গেছেন। যোধপুর পার্কে বিরাট বাড়ি - নরেন্দ্র পুরে বাগান বাড়ি -
  • , তা হবে। আমি অত সব জানিনা।
রুণু আর কথা বাড়ায়নি।
                                   
*******************************

এখানেই শেষ নয়। বিভূতি কাকুর সঙ্গে রুণুর জীবনে আর একবার দেখা হয়েছিলো।
তখন তার বিয়ে হয়েছে। বরের সঙ্গে সে এখন হায়েদ্রাবাদে থাকে। একদিন দুজনে সিনেমা দেখতে গেছে। স্মিতা পাতিলের বই - চক্র। ওদের ঠিক পেছনের সারিতে বেশ কয়েকজন মধ্য বয়সী বাঙালী ভদ্রলোক বসে সিনেমা দেখছেন। সব স্যুট টাই পরা। মনে হয় কোন conference এ হায়েদ্রাবাদে এসেছেন। সিনেমা দেখতে দেখতে ওঁদের আজে বাজে টিকা টিপ্পনির আর অন্ত নেই। রুণু ভাবতে লাগলো, আশ্চর্য - এঁরাই তো কারো বাবা, কারো জ্যাঠা, কারো বা স্বামী। এঁদের বাড়ির লোকেরা কি জানে এঁরা কিরকম লোক?
একটা scene ছিলো। ওই রকম আর কি। বুঝতেই পারছেন। পেছনের সারির ভদ্রলোকেরা উত্তেজিত - অত্যন্ত নোংরা ভাষায় comments করতে লাগলেন। রুণু ওর বরকে বললো - 
  • চলো অন্য seat এ গিয়ে বসি, এখানে আর বসে থাকা যাচ্ছেনা।

ওরা অন্য দিকে অন্য seat এ যাবার জন্য উঠে দাঁড়ালো, আর ঠিক সেই সময় screen থেকে এক ঝলক আলো ওই ভদ্রলোকদের ওপর এসে পড়লো। রুণু দেখলো ওদের একজন বিভূতি কাকু। উনি অবশ্য রুণুকে চিনতে পারেননি।

                        *******************

তারপর আবার বেশ অনেক বছর কেটে গেছে। বিভূতিকাকু মারাও গেছেন। আজ Father’s Day - বাবা দিবস। বিভূতিকাকুর মেয়ে অঞ্জলী রুণুর Facebook friend. দেখলো অঞ্জলী ওর বাবার সম্পর্কে কতো সুন্দর সুন্দর কথা লিখেছে। বাবা ওর hero ছিলেন। ওর জীবনের friend, philosopher and guide. বাবাকে জড়িয়ে ধরলে মনে হোত পৃথিবীতে আর কোন দুঃখ, কষ্ট, ভয় কিছুই নেই।

না, অঞ্জলীর চোখ দিয়ে ওর বাবাকে রুণুর চিনতে হবেনা - ওর বাবাকে রুণু চেনে। 


বিঃ দ্রঃ বিল কসবির মতো হিন্দি সিনেমার একজন প্রখ্যাত অভিনেতা, যিনি সর্বদা একজন স্নেহশীল এবং পরিবার-গত প্রাণ "বাবুজী" র ভূমিকার প্রায় গত তিরিশ বছর ধরে অভিনয় জগতে অসামান্য সাফল্যের অধিকারী – তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অন্য রকম মানুষ। মদ্যপান করার পরেই বেরিয়ে আসে তাঁর অন্য আর এক রূপ। বছর দুয়েক আগে Me Too অভিযানে যখন অগুন্তি মেয়েরা তাঁর বিরূদ্ধে অভিযোগ আনে (আদালতেও) শুধু তখনই ফিল্ম জগত থেকে তাঁকে বয়কট করা হয়। এ সম্ভব হয়েছে Social Media র দৌলতে। 



No comments: